১৬ বছরে পা রাখলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর যাত্রা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। কৃষিক্ষেত্রে শিক্ষাদান ও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরিই ছিল সিকৃবির প্রধান লক্ষ্য। অল্প সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়টি লক্ষ্যপূরণে দেখিয়েছে তাক লাগানো সাফল্য। টিলা ও সমতল ভূমি ঘিরে নগরীর আলুরতল এলাকায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। প্রায় ৫০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে ছোট-বড় টিলা।

সিলেট-জাফলং-তামাবিল বাইপাস রাস্তার পাশে ১২ একর ২৯ শতক ভূমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃক্যাম্পাস ও গবেষণা মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ৬টি অনুষদে ৪৭টি বিভাগ রয়েছে। বিসিএসসহ দেশে-বিদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা আজ সফল। সবাই এখন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জল করে আছে এবং দেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় চলছে গবেষণা কার্যক্রম।

স্বীকৃতিস্বরূপ বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও আন্তর্জাতিক স্কপাস ইনডেক্স জার্নালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১০০ এর অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় হাওরে জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে এখানকার গবেষকরা। বোরো ফসলনির্ভর হাওরাঞ্চলে একসময় শীতকালেও মাঠের পর মাঠ পতিত থাকত। সুনামগঞ্জের হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সিকৃবি নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। চলছে মসলা জাতীয় ফসল নিয়ে গবেষণা।

প্রোটিনসমৃদ্ধ সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২ জাত দুইটি সিলেট অঞ্চলে বছরব্যাপী প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সিলেট অঞ্চলের কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য স্থাপন করা হয়েছে অটোমেটেড এগ্রোমেটিওরোলজিক্যাল স্টেশন। কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণা করে চমক দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। হাওরে দারিদ্র্য বিমোচনে আগাম ধান চাষে সাফল্য, সিলেটের আবহাওয়া অনুযায়ী গ্রীষ্মকালীন শিম ও টমেটোর জাত উদ্ভাবন, আধুনিক কম্পিউউটার ভিশনের মাধ্যমে চায়ের ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তির দ্বারা চায়ের চারটি গ্রেড নির্ভুলভাবে নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন, স্বয়ংক্রিয় সেচ যন্ত্র উদ্ভাবন, উলম্ব ভাসমান খামারে (ভার্টিক্যাল ফ্লটিং বেড) একক স্থান থেকে অধিক ফসল উৎপাদন করে ক্রম-হ্রাসমান ভূমির উপর চাপ কমানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন,

মাছের মড়ক রোধে ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনসহ নানাবিধ গবেষণার পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ রক্ষায় চলছে গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম শোয়েব জানান, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশাসনিক সব কার্যক্রম চালিয়ে নিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন,

এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা শিক্ষা গবেষণার পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতিতে এগিয়ে রয়েছে এবং দেশ-বিদেশে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন বলেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে,

সেই লক্ষ্যে কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পাঠদান ও পরীক্ষাগুলো অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ বছরের একটি অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি ৩০ বছরের একাডেমিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন অনুষদে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে।

এ কারণে করোনাকালীন সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাসহ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।